
তুরস্কের ইরজুরুম হল একটি মনোরম শহর। যেন পৃথিবীর বুকে একটি জান্নাত। শীতকালে তা ঢেকে যায় বরফের শ্বেত চাদরে। এই মনোরম শহরে একটি ঐতিহাসিক প্রথা রয়েছে যা শুনলে আপনি রীতিমত অবাক হবেন।
তুরস্কের এরজুরুমে ‘হাজার এক খতম’ (Bir Bin Hatim) নামক একটি প্রথা আছে। এই প্রথা অনুযায়ী ইরজুরুমবাসী প্রতিবছর পবিত্র কুরআন এক হাজার এক খতম দিয়ে থাকেন। দীর্ঘ ৫০০ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা তাঁরা আজও পালন করেন।
এই প্রথা অনুযায়ী ইরজুরুমবাসী ঘোড়ার পিঠে চড়ে হাজার এক খতম দেন। আবার অনেকে ইরজুরুমের ঐতিহাসিক ‘উলু’ (Ulu) মসজিদে খতম দেন। উলু মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল হিজরী পঞ্চম শতকে।
এই প্রথা শুরু করেন ‘বীর আলি বাবা’ নামক একজন ইরজুরুমের আলেম। সেসময় ইরজুরুম মহাদূর্যোগের মধ্যে যাচ্ছিল। তিনি ঘোড়ায় চেপে ইরজুরুমের এপ্রান্ত থেকে সে প্রান্ত খতম দিতে দিতে ও আল্লাহর কাছে এ দুর্যোগ থেকে শহর কে রক্ষা করার দুয়া করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি বলতেন যে প্রতিবছর যদি পবিত্র কোরআন থেকে এক হাজার খতম দেওয়া যায় তাহলে আল্লাহ পাক এ শহরকে দুর্যোগ থেকে বিশেষ ভাবে রক্ষা করবেন।
সেসময় ইরযুরুমের হাকিম সাইফুদ্দীন আযীযোগলু এই প্রথা চালু করেন যা ১৯০০ শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এরপর ইরযুরুমের মুফতী মুহাম্মদ স্বাদিক্ব সোলাকযাদ আফেন্দী এ প্রথা পূণরায় চালু করেন।
বির আলী বাবা (রহঃ) উসমানী সুলতান ইয়াউজ সেলিম ও সুলতান সুলাইমান আল ক্বানূনী (রহঃ) এঁর যুগের মানুষ ছিলেন। এসময় উসমানীয় সাম্রাজ্য শুধু দেশ বিজয় নয় বরং জ্ঞান বিজ্ঞানের উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল।
এবছর ইরযুরুমে বরফপাতের স্বত্বেও ইরযুরুমবাসী হাজার এক খতম শুরু করেছেন। ১৩ ডিসেম্বরে এটা শুরু হয়েছে ও ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এটা চলবে। ফজর নামাযের পর বীর আলী বাবা রহঃ এঁর কবরের পাশে ঘোড়ায় চড়ে খতম চলছে। ইরযুরুমের মুফতী হাসান হুসাইন সোলা এই প্রথার ইতিহাস আনাদোলুর কাছে বর্ণনা করেছেন।
আমাদের সবার উচিৎ প্রতি বছর হাজার এক খতম চালু করা।
© মুহাম্মাদ ইয়াসির আরাফাত মল্লিক