নবগুপ্তের দশকথা

ইয়াসির আরাফাত আল হিন্দী
আমাদের এই বসুন্ধরা একটি অদৃশ্য রহস্যময় চাদরে আবৃত। চারিদিকে পরিদৃশ্যমান অনিন্দ্যসুন্দর এই প্রকৃতি যেন রহস্যের সাথে প্রেমলীলায় মগ্ন। রহস্যের সাথে তার জন্ম জন্মান্তরের  বন্ধন। তাই সে সর্বদা নিজেকে আগলে রাখে নানা ধরনের রহস্য দিয়ে। কিছু রহস্য এমন রয়েছে যার জট খোলার সাধ্য মনুষ্যজাতির রয়েছে। আবার কিছু রহস্য রয়েছে যা অমীমাংসিতই থেকে যায় চিরকালের জন্য। ভারতবর্ষের কথাই ধরা যাক। আমাদের এই ভারতবর্ষ হল মানবসভ্যতার মাতৃভূমি। ভারতের বুকে নানা বিভিন্ন সময়ে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের হাড় হিমকরা রহস্য। কখনও তা রহস্যময় রশ্মি রূপে , আবার কখনও অজানা ঘাতক রূপে আবার কখনো অন্য কোনো রূপে সেগুলো তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়ে যায়! এক অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি যেন আচমকা আসে আবার আচমকা সরে যায়। ১৩৫ কোটির দেশে কত কিছুই তো ঘটে, সব কিছুর ব্যাখ্যা কি মেলে?এমন বহু ঘটনা রয়েছে, যার তল খুঁজে পায়নি কোনো পন্ডিত, কোনো ইতিহাস অথবা কোনো গোয়েন্দা অথবা বিজ্ঞান! ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া সেইসকল অমিমাংসিত অসমাপ্ত রহস্যের একটি হল ‘নবগুপ্তের রহস্য’। এটা এমন এক রহস্যময় গল্প  যার সূত্রপাত অদ্যকাল হতে প্রায় দুই হাজার বৎসর পূর্বে।  কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই সুদীর্ঘ কাল ধরে রহস্যটি মনুষ্য চক্ষুর অন্তরালে চাপা পড়ে ছিল। তো চলুন  পরিচিত হওয়া যাক সেই দীর্ঘকাল পর্দার আড়ালে থাকা রহস্যটির সাথে। পবিত্র কুরআন মাজীদে সূরা নিসার ১১৭ নম্বর আয়াতপাকে আল্লাহ জাল্লা জালালুহু ইরশাদ ফরমিয়েছেনঃ
﴾আল্লাহ ছাড়া তারা শুধু নারীমূর্তিকে ডাকে এবং (প্রকৃতপক্ষে ) কেবল অবাধ্য শয়তানকে ডাকে।﴿
শয়তানবাদী ও শয়তানবাদের (Satanism)  নিয়ে আমাদের  অনেকেই অবগত রয়েছি। শয়তান পূজারীদের ভারতে আগমন ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বৎসর পূর্বে আর্যদের হাত ধরে। আর্যদের পূর্বেও ভারত উপমহাদেশে শয়তানবাদীদের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। কিন্তু আর্যদের  আগমনের সাথে সাথে ভারতে ব্যপকভাবে শয়তানবাদ বা স্যাটানিজম চর্চা বেড়ে যায়। ভারত পরিণত হয় স্যাটানিজম চর্চার একটি অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে। সূদুর ব্যবীলন হতে আমদানিকৃত বিভিন্ন দেবদেবীর ভারতীয়করণ করা হয়।  আর্যরাই যে প্রথম ব্যাবিলনীয় শয়তানপূজারীদের দেবদেবীকে ভারতীয়করণ করেছিল বিষয়টা এমন ছিল না। আর্যদের পূর্বে ভারতের সিন্ধু উপত্যকায় একটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই সভ্যতাটির নাম ছিল হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতা। হরপ্পা সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদের মধ্যে এই সভ্যতাটি ‘হরিয়ুপ্য’ নামে উল্লেখিত হয়েছে (India: A History by John Keay, Pg. 24) । ‘মহেঞ্জোদাড়ো’ শব্দটির অর্থ হল ‘মৃত্যুঢিপি’। আর হরপ্পা শব্দটি দুইটি শব্দের সমষ্টি ‘হারা’ বা ‘হেরা’ ও আপ্পা , এর অর্থ হারার দূর্গ। কিন্তু এই হারা (Hera) কে?  হারা বা হেরা হল প্রাচীন গ্রীকদের বিবাহের দেবী ও তাদের দেবতা জিউসের স্ত্রী। ঐতিহাসিকদের মতানুসারে গ্রীকরা এই দেবীর ধারণাটি নিয়েছিল প্রাচীন ব্যবিলনীয় দেবী সেমিরামিস থেকে (সেমিরামিস হল শয়তানপূজারীদের মহামানব বা দেবতা নমরুদের স্ত্রী)। এ থেকে আমর আর্যদের পূর্ব হতেই ব্যাবীলনী দেবদেবীর পূজা অর্চনা ভারতে প্রচলিত ছিল। হরপ্পা যুগে মানুষেরা নগ্নতা ও উলঙ্গতায় লিপ্ত হয়ে যায়। সেখান থেকে প্রাপ্ত উলঙ্গ যৌনউত্তেজক নারীমূর্তিগুলো এর প্রমাণ বহন করে। ফলে একসময় আল্লাহর আজাবে তারা বিলুপ্ত যায়। অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মধ্যে সিন্ধু সভ্যতা বন্যার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।   এরপর আর্যদের আগমনের মাধ্যমে ভারতে নতুন করে শয়তানবাদ চর্চা শুরু হয়।
[   মহেঞ্জোদাড়ো থেকে প্রাপ্ত একটি সিন্ধু যুগীয় নারীমূর্তি, সূত্রঃ India: A History by John Keay]
ভারতে আগমনের পূর্বে আর্যদের একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেগুলোর অনেকটা কালের করালগ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন প্রাচীন পৌরাণিক কিতাবাদী ও ঐতিহাসিকদের ইতিহাসগ্রন্থে তাদের বিষয়ে নানান তথ্য পাওয়া যায়। শয়তানবাদ গবেষকরা বিভিন্ন ইতিহাসের আলোকে প্রমাণ করেছেন যে, আর্যরাই ছিল প্রকৃতপক্ষে শয়তানবাদীদের পূর্বপুরুষ  আর তারাই সর্বপ্রথম যাদুবিদ্যা তথা তন্ত্রবিদ্যার প্রচার প্রসার ঘটায়। বিশিষ্ট শয়তানবাদ গবেষক এবং ঐতিহাসিক  ডেভিড লিভিংস্টোন তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘The Dying God’ এর মধ্যে এই বিষয়ে দলিল প্রমাণ সহ বিষদ আলোচনা করেছেন। তিনি উক্ত কিতাবের ১০ নম্বর পৃষ্ঠার মধ্যে বলেছেনঃ
“Essentially, the Ancient Wisdom is the Kabbalah, but occultists refused to regard as Jewish, but as representing the lost wisdom of the Aryan race. The Bible account of the Sons of God intermarrying with the descendants of Cain was thought to refer to the creation of the Aryan race on Atlantis, where they were taught all occult knowledge, including astrology, alchemy, magic and the belief in reincarnation. Thus, borrowing from the account of Noah, following the Flood, the same catastrophe that sunk Atlantis, the Aryans escaped and sought refuge in the highest mountains in the world. The Aryans later emerged from the region and swept forth, invading the known world. Bringing everywhere with them, not only the Indo-European language, but the knowledge rescued from their former abode, the Aryans invaded India, where they were responsible for the wisdom of the Brahmins, who then became the instructors of the Egyptians  and the Jews.”
গবেষকগণের   দেওয়া তথ্য অনুসারে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের (বাইবেলে যিনি Solomon নামে উল্লেখিত) জামানায় প্রাচীন বাবেল (Babylon) শহরে হারুত ও মারুত (বাইবেলে ‘The Fallen Angels’ নামে পরিচিত) নামক দুই ফিরিশ্তা যখন যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন তথায় অবস্থানকারী শয়তানের অনুসারী আর্য সম্প্রদায় তাদের নিকট হতে যাদুবিদ্যা বা তন্ত্রশিক্ষা  গ্রহণ করে। এরপর উক্ত যাদুবিদ্যার প্রচার প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ফিতনা ফাসাদাত সৃষ্টি করতে থাকে। পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ জাল্লা জালালুহু বাবেল শহরে হারুত ও মারুত কর্তৃক শয়তানবাদীদের যাদুবিদ্যা শিক্ষার ব্যপারে ইরশাদ করেছেনঃ
﴾আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত।﴿
 
[ আল কুরআনুল মাজীদ, সূরাহ বাকারাহ, আয়াত শরীফঃ ১০২]
শয়তানবাদ গবেষক লিভিংস্টোন তাঁর ‘Terrorism and the illuminati’ কিতাবের মধ্যে বলেনঃ
“Therefore, through intermarriage with the Canaanites, the later Kabbalists could claim descent from the Anakim, and the Fallen Angels, or Lucifer and his legions. These Anakim, supposedly, were the original inhabitants of Atlantis, or Aryans. The Aryans are considered by the Illuminati to be the original core bloodline, a hybrid of humans and “divine” beings, responsible for the preservation of occult knowledge. According to modern historians, influenced by Kabbalistic legend, these Aryans, also known as Indo-Europeans, survived the Flood, or sinking of Atlantis, and found refuge in the mountains of Asia. From there they emerged the conquer the known peoples, spreading their customs and language to Central Asia, Iran, or Persia, and into Europe.” (পৃষ্ঠাঃ ১১)
প্রাচীন আর্যরা যাদুবিদ্যায় যেমন পারদর্শী ছিল তেমনি একইসাথে তারা ছিল উগ্রজাতীয়তাবাদী। তারা নিজেদেরকে অন্যান্য জাতির থেকে উন্নত মনে করত।  সম্ভবতঃ সর্বপ্রথম তাদের মাধ্যমেই জাতিভেদ প্রথার প্রবর্তন ঘটে। আর্যরা নিজেদেরকে শয়তানের বংশধর বলে মনে করত এবং মনে করত যে তারাই হল মানবজাতির শ্রেষ্ঠাংশ। বর্তমান যুগে হিন্দু সমাজের মধ্যে প্রচলিত ‘বর্ণপ্রথা’ নামক যে বৈষম্যমূলক প্রথা প্রচলিত রয়েছে ভারতের বুকে এর আমদানি করেছিল আর্যরাই।  বর্ণপ্রথা বলতে  মূলতঃ চারটি বর্ণ বা শ্রেণীকে বোঝানো হয়ে থাকে, আর সেগুলো হচ্ছে ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় ও শূদ্র। এছাড়াও আরো উপভাগ রয়েছে তবে  এই চারটি বর্ণ হল বর্ণপ্রথার  প্রধানতম চারটি ভাগ। প্রচলিত ধারণা অনুসারে, প্রথম ঋগ্বৈদিক যুগে (ভারতীয় ঐতিহাসিকদের মতে এর সময়কাল হল ১৫০০-১০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দ। তবে পরবর্তীতে ১৮০০  খৃষ্টপূর্বাব্দে ভারতে আর্য কঙ্কালের সন্ধান পাবার পর থেকে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, ভারতে আর্যদের আগমন আরো পূর্বে হয়েছিল। আমার গবেষণা অনুসারে ভারতে আর্যদের আগমন ঘটে আক্কাদীয় জামানার শেষের দিকে অর্থাৎ ২১০০-২৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে। ঐতিহাসিক ইবনে খলদূন রাহিমাহুল্লাহ তাঁর কিতাবুল এবারের মধ্যে ঠিক এই সময়টাতে ভারতের অভ্যন্তরে একটি বৈদেশিক অভিযানের কথা উল্লেখ করেছেন) এইধরনের বর্ণপ্রথার অস্তিত্ব ছিল না। হিন্দু শাস্ত্রবিদ ও কিছু ঐতিহাসিকদের মতানুযায়ী আর্যরা ভারতে আগমনের পর কর্মক্ষেত্রে সুবিধার জন্য বর্ণ প্রথার প্রবর্তন ঘটায় তবে প্রথমদিকে বর্ণভেদ বলতে কেবলমাত্র কর্মভেদকে বোঝানো হত। পরবর্তী আর্যযুগে যজুর্বেদের মধ্যে  বর্ণভেদ সংক্রান্ত একটি মন্ত্র প্রবিষ্ট করানো হয়, ফলে ধীরে ধীরে এই প্রথাতে  বিদ্বেষের সংমিশ্রণ ঘটে। পরবর্তীতে এটি একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয় এবং গুপ্ত যুগে এই বৈষম্য  ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কিন্তু এই প্রচলিত ধারণাটি অলিক কল্পনামাত্র। আর্যদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব ভারতে আগমনের বহু আগে হতেই  বিদ্যমান ছিল।   আর্যরা যখন সর্বপ্রথম ভারতে আক্রমণ করে তখন তারা ভারতীয় আদিবাসীদের ব্যপকহারে গণহত্যা করেছিল। বন্দী করেছিল বহু ভারতীয়কে। এসময় তারা আদি ভারতীয়দের ‘দস্যু’ , ‘দাস’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করেছিল। এসবকিছুই আর্যদের উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকে নির্দেশ করে।  ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা তাঁর ‘India’s Ancient Past’ কিতাবে বলেনঃ
“The Aryans migrated to India in several waves. The earliest wave is represented by the Rig Vedic people, who came to the subcontinent in about1500 BC. They came into conflict with the indigenous inhabitants called dasas, dasyus, etc. As the dasas are also mentioned in ancient Iranian literature, they seem to have been a branch of the early Aryans. The Rig Veda mentions the defeat of Sambara by a chief called Divodasa of the Bharata clan. In this case,the term dasa appears in the name Divodasa. In all probability, the dasyus in the Rig Veda represent the original inhabitants of India,and an Aryan chief who overpowered them was called Trasadasyu. The Aryan chief was soft towards the dasas, but very hostile to the dasyus. The term dasyuhatya, slaughter of the dasyus, is repeatedly used in the Rig Veda. The dasyus possibly worshipped thephallus and did not husband cattle for dairy products.
[India’s Ancient Past, Pg. 128]
এখানে দেখা যাচ্ছে যে, আর্যরা যখন ভারতে আসে সেই সুপ্রাচীন কালেই ভারতে দুইটি বর্ণ তৈরি হয় আর্যবর্ণ এবং দাসবর্ণ। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার তাঁর ‘Early India from origins to 1300’ কিতাবের ১১২ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“There was earlier thought to be a racial difference between the Aryas who spoke Indo-Aryans and those whom they met with, whom they called dasas, dasyus and panis. The statement that there were two varnas- the arya-varna and the dasa-varna – was quoted as evidence.
[Early India from origins to AD 1300 , Pg. 112]
 অতয়েব এবিষয়ে কোনোপ্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ভারতে আগমনের পূর্বেও আর্যদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব ছিল।
আর্যদের  সাথে হারুত ও মারুতের  ইতিহাসগত  ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মূলতঃ হারুত মারুতের সময় থেকে আর্যদের মধ্যে যাদুবিদ্যার অনুপ্রবেশ করে। তারাই হারুন মারুতের থেকে প্রথম যাদুবিদ্যা শিক্ষা নেয়। শয়তানবাদীরা প্রাচীন যুগ থেকে এদেরকে অ্যানাকিম  অথবা খাঁটি আটলান্টিসের বাসিন্দা এবং যাদুবিদ্যার সংরক্ষক হিসেবে শয়তানবাদীরা মনে করে থাকে। কাব্বালীয়দের মতে অ্যানাকিম হল কাবিল (Cain) ও কেনানের বংশধর যাদের নিকট সুপ্রাচীনকাল থেকে গুপ্তরহস্য সংরক্ষিত আছে। আর্যরা ব্যবীলন হতে যাদুবিদ্যা শিক্ষার পর তারা ম্যাজাইদের ছদ্মবেশে ম্যাজাইদের মধ্যে মিশে যায় এবং তাদের মধ্যে তন্ত্রবাদের ব্যপক প্রচার শুরু করে। ফলে ম্যাজাইদের মধ্য হতে একটি যাদুকর সমাজ গড়ে ওঠে। ইতিহাস বলে যে, ম্যাজিক শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে এই ম্যাজাইদের নামানুসারে।
হারুত মারুতের মাধ্যমে ব্যাবিলনে যে যাদুবিদ্যার প্রচলন ঘটে তা প্রাচীন ম্যাজাইদের (আর্যদের) মাধ্যমে ক্যালদানীয় ও পরবর্তীতে ইহুদিদের মধ্যে প্রবেশ করে এবং ইহুদি ধর্মে কাব্বালীয় মতবাদ নামে নতুন একটি মতবাদ  তৈরি হয়। কাব্বালীয় শাস্ত্র আদতে ছিল যাদুবিদ্যা শাস্ত্র যা পরবর্তীতে ইহুদিদের মধ্যে ব্যপক প্রসিদ্ধি লাভ করে। যদিও প্রথম যুগে ইহুদি ধর্মে যাদুবিদ্যা হারাম বা নিষিদ্ধ ছিল। প্রাচীন কাব্বালীয় ছদ্মবেশী ইহুদিরা  নিজেদের অ্যানাকিমের বা আর্যদের বংশধর হিসেবে মনে করত এবং কেবলমাত্র কানানিদের (কেনানের বংশধরদের) মধ্যেই বিবাহ করত যাতে তাদের জাতিসত্তা সংরক্ষিত থাকে। তারা মনে করত আর্য বা অ্যানাকিমরা হল মানব ও ফিরিশ্তার মিশ্রণ । গবেষকরা বলেন এই বিশ্বাসটি মূলত হারুত মারুত বা Fallen Angels থেকে উৎসারিত।
প্রাচীনকালে পারসিকরাও নিজেদেরকে আর্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করত।  পারসিক রাজ রাজারা এমনকি জরাথুস্ট্রও নিজেকে আর্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ব বোধ করতেন। পারস্য সম্রাট দারিয়ুস নিজেকে আর্য এবং বিশ্তস্পাহ্য পুসার বংশধর বলে মনে করতেন। পারস্যের ইতিহাস অথবা স্যাটানিক মিথ্রবাদ (Mithraism) ও তার ইতিহাস পড়লে পারসিক আর্যদের স্বজাতি বা পারসিকদের আর্য হওয়ার কারণে গর্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে স্যাটানিক মিথ্রবাদ তত্ত্বের বিকাশে পারসিক আর্যদের বড় অবদান রয়েছে। মিথ্র যাকে বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মে মৈত্রেয়, পারসিকরা মিত্র এবং গ্রীকরা মিথরা  জ্ঞান করে থাকে ঐতিহাসিকদের মতে এ তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছিল  রোমান সাম্রাজ্য বিশেষতঃ শয়তানপূজারী কম্যাজেনি রাজবংশ থেকে যাদের উপর প্রাচীন হেরডীয় বংশ, সিরীয়ার হিমসের বাল পূজারী সন্তরাজা (The Emmesene) দের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। এই মিথরা আসলে কে এই নিয়ে আমার গবেষণা চলছে। এপর্যন্ত আমার কাছে  দুইটা মত  প্রণীধানযোগ্য বলে মনে হয়েছে।  আর তাহল মিথরা বলে স্যাটানিস্টরা যার উপাসনা করে থাকে সে আদতে  নমরূদ অথবা দাজ্জাল। কারণ আধুনিক যুগের কতিপয়  স্যাটানিস্ট যেমন ম্যানলি পি হল, টেক্স মার্স, রূহ মন্টগোমারি, জেন ডিক্সন প্রমুখ তাদের কিতাবে মিথ্রকে  ভবিষ্যতে আগমন করবেন এমন এক অবতার হিসেবে দেখিয়েছেন, যিনি তাদের নিউ এজার আন্দোলনকে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। আবার অন্যদিকে মিথ্রবাদের ইতিহাস গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, এই থিওরী যাদের মাধ্যমে প্রসার ঘটে তাদের মধ্যে সিরিয়ার সন্তরাজা এমিসেনরা হল অন্যতম। এই এমিসেন রাজারা ছিল ‘বাল’ নামক দেবতার পূজারী। বাল দেবতার উদ্ভব ঘটে প্রাচীন ব্যবিলন হতে। ব্যবিলনরাজ নমরুদের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সেমিরামিস প্রজাদের মধ্যে নমরুদ, সেমিরামিস ও তার পুত্রের পূজার প্রবর্তন ঘটায়। বিখ্যাত ওরিয়েন্টালিস্ট ঐতিহাসিক যাঁকে ‘Father of Assyriology’ বলা হয়, সেই জর্জ রাওলিন্সন তাঁর কিতাব ‘The Five Great Monarchies of the Ancient Eastern World’ এর  দ্বিতীয় খন্ডের ২৪২ পৃষ্ঠাতে মেসোপটেমিয়ার বেল দেবতার বিবরণী লিখতে গিয়ে নমরূদকে বেল হিসেবে আখ্যায়িত করে লিখেছেনঃ
“The classical writers represent Bel as especially a Babylonian god, and scarcely mention his worship by the Assyrians ; “ but the monuments show that the tnie Bel (called in the former volume Bel-Nimrod) was worshipped at least as much in the northern as in the southern country.”
ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার হিসলপ তাঁর ‘The Two Babylons’ কিতাবে  বেলাস / বা’ল/ বেল এর বর্ণনায়  বলেনঃ
“There Belus, that is Nimrod, after having dispelled the primeval darkness, is said  to have separated heaven and earth from one another, and to have orderly arranged the world. (BEROSUS, in BUNSEN) These words were intended to represent Belus as the “Former of the world.” But then it is a new world that he forms; for there are creatures in existence before his Demiurgic power is exerted.The new world that Belus or Nimrod formed, was just the new order of things which he introduced when, setting at nought all Divine appointments, he rebelled against Heaven. The rebellion of the Giants is represented as peculiarly a rebellion against Heaven. To this ancient quarrel between the Babylonian potentates and Heaven, there is plainly an allusion in the words of Daniel to Nebuchadnezzar, when announcing that sovereign’s humiliation and subsequent restoration, he says (Dan 4:26), “Thy kingdom shall be sure unto thee, when thou hast known that the HEAVENS do rule.” (Pg. 54)  ।
অতয়েব দেখা যাচ্ছে যে,  মিথরার  নমরূদ হবার সম্ভাবনাও রয়েছে । পারসিক জরাথ্রুস্টবাদও বেল তথা নমরূদ পূজারী হাররানের মুশরিকদের দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত ছিল। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল বীরূনী (রহঃ) তাঁর কিতাবের মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, যরাথ্রুষ্ট তার মতবাদের অর্ধেক হাররানবাসীদের থেকে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “زرادشت وهو نصف الحرانية” ।
এখানে আরো একটি আশ্চর্যজনক বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,  কমেজেনে  রাজবংশ তাদের মিথ্রপূজা এবং মিথ্ররহস্য তত্ত্বটি নিয়েছিল পারসিক ম্যাজাইদের থেকে। কিন্তু এই ম্যাজাই কারা? ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীনকালে পারস্য ও ব্যবিলন সীমান্তে অধুনা কুর্দিস্তান এলাকায় মেডে নামক একটি জাতীর বসবাস ছিল। এই মেডেরা ছিল মূলতঃ আর্য। সুপ্রাচীন যুগ থেকে তারা সেখানে বসবাস করত। পরবর্তীতে তারা তাদের নাম পরিবর্তন করে এবং মেডেয়া বা বর্তমান কুর্দিস্তানের নামানুসারে তাদের নাম রাখা হয় মেডীয় । ঐতিহাসিক হেরোডোটাস তাঁর সুবিখ্যাত কিতাব হিস্ট্রিজের সপ্তম বইতে মেডেদের আর্য হবার বিষয়ে লিখেছেনঃ
“The Medes were formerly called by everyone Arians,but when the Colchian woman Medea came from Athens to the Arians, they changed their name,like the Persians [did after Perses, son of Perseus and And romeda].This is the Medes’ own account of themselves.”
[Histories, Book 7, Chap. 61-67)
 হেরোডোটাসের বর্ণনা হতে মেডেদের বিভিন্ন গোত্র সম্পর্কে একটি বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেনঃ
“Thus Deioces collected the Medes into a nation, and ruled over them alone. Now these are the tribes of which they consist: the Busge,the Paretaceni, the Struchates, the Arizanti, the Budii, and the Magi.”
  হেরোডোটাসের বর্ণনা হতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রাচীন ম্যাজাইরা হল  পারসিক মেডে আর্যদের একটি শাখা গোষ্ঠী। রোমান কমেজেনেরা মিথ্রবাদ নিয়েছিল এই ম্যাজাইদের থেকে যারা ক্যালদানীয় ম্যাজাই নামেও পরিচিত । ঐতিহাসিকদের মতে এই ম্যাজাইরা মিথ্রবাদকে  বাল বা নমরূদের সাথে সংযুক্ত করত (দেখুনঃ The Dying God by Livingston) । হারুত ও মারুতদের থেকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা করে আর্য ম্যাজাইরা ব্যপকহারে মানুষের মধ্যে যাদুবিদ্যার প্রচার প্রসার ঘটাতে শুরু করেছিল। ধীরে ধীরে তাদের তন্ত্রবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল দিক দিগন্তে ।
প্রাচীন ভারতে  আর্যরা  তাদের যাদুবিদ্যা বা তন্ত্র এছাড়াও অন্যান্য স্যাটানিক কাল্ট সহ এসেছিল। আর্যদের আগমনের পর সেই সুপ্রাচীনকাল হতেই ভারতে তারা স্যাটানিক রিচুয়াল সমূহ ঘটা করে পালন করতে থাকে এবং মানুষকে স্যাটানিজমে দিক্ষিত করতে শুরু করে, মানুষের মাঝখানে ধর্মের নামে তন্ত্রবাদ ও স্যাটানিক কাল্টের প্রচার ঘটাতে থাকে।
আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব দুইশত শতাব্দী অথবা তার কিছু পূর্ব হতে অন্যান্য বিভিন্ন জায়গার মতো ভারতেও স্যাটানিকরা  একটি বিপ্লব ঘটায় যা প্রায় খৃষ্টাব্দ পাঁচশত অব্দ পর্যন্ত চলমান ছিল। এসময় অন্যান্য ধর্মের মতো হিন্দু ধর্মেও ব্যপক পরিবর্তন সাধিত হয়। স্যাটানিস্টরা তন্ত্রবাদ, শৈববাদ, ভাগবতবাদ, ত্রিমুর্তী (Trinity), মানববলি ইত্যাদি মতাদর্শের প্রচলন ঘটায়। ফলে হিন্দুধর্ম পরিপূর্ণরূপে বিকৃত হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার এই পরিবর্তিত ও বিকৃত হিন্দু ধর্মকে ‘কৃত্রিম হিন্দুধর্ম’ বা ‘Synthetic Hinduism’ আখ্যা দিয়েছেন।
ঠিক এই সময়কালে  ভারতের মধ্যে গড়ে উঠেছিল স্যাটানিস্টদের একটি গুপ্ত সংগঠন, যাকে আদিফ্রীম্যাসন হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। যেমন অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রীম্যাসন নামক একটি গুপ্ত সমাজ বিশ্বজুড়ে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল ঠিক তেমনি আদীকালে ভারতের বুকে গড়ে উঠেছিল এমনি এক গুপ্ত সংস্থা। যাদের লক্ষ্য ছিল ‘বিশ্বকে শাসনক্ষমতা দখল করা’।  সুদীর্ঘ হাজার হাজার বছর এই গুপ্তসমাজটি মনুষ্যচক্ষুর অন্তরালে চাপা পড়েছিল। কেও কেও এটির অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন, আবার কারো কারো মতে সেই প্রাচীন যুগে পথচলা শুরু করা গুপ্ত শয়তানবাদী সংস্থাটির অস্তিত্ব আজও রয়েছে। বিভিন্ন ছদ্মবেশে তারা ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে । সংগঠনটি ‘নবগুপ্তের গুপ্তসমাজ’ বা ‘ The Secret Society of Nine Unknown Men’ নামে পরিচিত। নয়জন প্রধান সদস্য বিশিষ্ট হবার কারণে সমাজটির নাম হয়েছে ‘নবরত্ন’ বা ‘নবগুপ্ত’। শোনা যায় প্রাচীন ভারতীয় মৌর্য সাম্রাজ্যের বাদশাহ সম্রাট বিন্দুসারের পুত্র সম্রাট অশোক ছিলেন এই সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। এজন্য একে ‘অশোকের নবরত্ন’ বা ‘অশোকের নবগুপ্ত’ বলা হয়ে থাকে।
 হিন্দু মিথোলজি অনুসারে নয় সংখ্যাটি বেশ গুরুত্ববহ। নয় সংখ্যাকে পূর্ণতার প্রতীক হিসেবে মনে করে থাকে তারা। এজন্য গুপ্ত নবরত্ন ছাড়াও প্রাচীন ভারতে নয় সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন প্রাচীন ভারতের অপর এক বাদশাহ বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় নয়জন জ্ঞানী সভাসদ সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল নবরত্ন এঁরা ছিলেন যথাক্রমে  অমরসিংহ, কালিদাস, ক্ষপণক, ঘটকর্পর, ধন্বন্তরি, বরাহমিহির, বররুচি, বেতালভট্ট ও শঙ্কু।
তবে অশোকের নবরত্ন ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। এর প্রেক্ষাপটও ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আনুমানিক ২৬১ খৃষ্টপূর্বে বাদশাহ অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। অতঃপর ঘটে যায় মানবসভ্যতার একটি নিষ্ঠুরতম  ট্রাজেডি। এই যুদ্ধে নিহত হয় প্রায় একলক্ষ মানুষ। এই যুদ্ধটি বাদশাহ অশোক তথা মগধের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এক নবযুগের সূচনা করেছিল। ঐতিহাসিকগণের মতে, এই যুদ্ধের বিভৎসতা অশোকের জীবনে ব্যপক প্রভাব ফেলে এবং তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন ও ‘অহিংস নীতির’ চাদের মুড়ে ফেলেন তাঁর সাম্রাজ্যকে।  আ শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ডসের মধ্যে লেখক ওয়েলস অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে বলেনঃ
“He adopted the peaceful doctrines of Buddhism and declared that henceforth his conquests would be conquests of religion” (Pg. 115)
অতঃপর আনুমানিক ২৩৫ খৃষ্টপূর্বাব্দে তিনি নবরত্ন সমাজটি গঠন করেন। অনেকে মনে করেন, এই প্রাচীনতম গুপ্তসমাজটি গঠনের প্রধানতম উদ্দেশ্য ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে রক্ষা করা। এখানে প্রশ্ন হতে পারে কাদের থেকে রক্ষা করা? তাঁরা বলেছেন, অশোক চেয়েছিলেন অত্যাধুনিক মানব বিধ্বংসী প্রযুক্তির জ্ঞানকে মানবচক্ষুর আড়ালে রাখা ও নিজেদের করায়ত্ত্বের মধ্যে রাখা যাতে এই জ্ঞান অন্যদের হাতে চলে না যায় ফলে আবার মানব বিধ্বংসী ঘটনা ঘটে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ একটি ঠুনকো যুক্তি। কারণ অশোকের এই গুপ্ত সংগঠনটি ছিল সম্পূর্ণ শয়তানবাদী সংগঠন এবং তার সদস্যরা যুগে যুগে শয়তানপূজারীদের কাজ করে এসেছে।তাছাড়া তারা যাদুবিদ্যা চর্চায় পারদর্শী ছিল। সংগঠনটির কথা সর্বপ্রথম উঠে আসে বৃটিশ ঔপন্যাসিক এবং বিশিষ্ট স্যাটানিস্ট তালবূত মান্ডি প্রণীত উপন্যাস ‘ The Nine Unknown’ কিতাবে। তালবূত ছিলেন ইলুমিনাতিদের তৈরি নিউ এজার মুভমেন্টের অঙ্গদল থিওসোফিক্যাল সোসাইটির সক্রিয় সদস্য। নিউ এজার আন্দোলন কি? এবং এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি তা আমরা যারা শয়তানবাদ নিয়ে পড়েছি তারা প্রত্যেকেই জানি। যাঁরা এবিষয়ে জানেন না, তাঁরা বিশিষ্ট স্যাটানিজম গবেষক রাল্ফ এপারসন প্রণীত ‘ The New World Order’ কিতাবটি অধ্যায়ন করতে পারেন।
মান্ডি সাহেব ভারতে আসার পর নয়জন প্রধান সদস্য বিশিষ্ট গুপ্ত দলটির সন্ধান পান এবং গভীরভাবে অনুসন্ধানের পর এদের গুপ্ত শয়তানবাদ চর্চা ও অকাল্টবাদ নিয়ে জানতে পারেন। তিনি তাঁর পুরো অভিজ্ঞতাকে তাঁর উক্ত কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। এই গুপ্ত সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল অনেকটা ইসলামী তাসাউফ ও আওলিয়ায়ে কিরামদের ধাঁচে। ইসলামী তাসাউফে যেমন আবদাল, আকতাব, গওস প্রভৃতি ভাগ থাকে তেমনি এদের বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। এই সমাজে প্রধান নয়জন জ্ঞানী থাকেন, তাঁদের প্রত্যেকের অধীনে আরো নয়জন করে জ্ঞানী থাকেন আবার তাদের অধীনে আরো নয়জন করে জ্ঞানী থাকেন। এভাবে চলতে থাকে। অথচঃ একজন প্রত্যেকটি নয়ের সমষ্টি অপর নয়জনের সমষ্টি সম্পর্কে জানেন না। এদের একজন করে মৃত্যু হলে অপরজনকে তার স্থানে স্থলাভিষিক্ত করা হয়ে থাকে।প্রথম  নয়জন প্রধান ব্যক্তিকে নয়টি বিশেষ বিষয়ে গবেষণা করতে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা সেই বিশেষ গবেষণা বিশেষ নয়টি বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন। নবগুপ্তের বিষয়টি উঠে এসেছে  Louis Pauwels ও Jacques Bergier প্রণীত The Morning of Magicians কিতাবে। উক্ত কিতাবের ৩৬ থেকে ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছেঃ
There is reason to believe, moreover, that in other civilizations science, though not inexistent, was kept secret. Such would seem to have been the origin of the marvelous legend of the Nine Unknown Men.
This tradition goes back to the time of the Emperor Asoka, who reigned in India from 273 BC. He was the grandson of Chandragupta who was the first to unify India. Ambitious like his ancestor whose achievements he was anxious to complete, he conquered the region of Kalinga which lay between what is now Calcutta and Madras. The Kalingans resisted and lost 100,000 men in the battle.
At the sight of this massacre Asoka was overcome. Forever after he experienced a horror of war. He renounced the idea of trying to integrate the rebellious people, declaring that the only true conquest was to win men’s hearts by observance of the laws of duty and piety, because the Sacred Majesty desired that all living creatures should enjoy security, peace, and happiness and be free to live as they pleased.
A convert to Buddhism, Asoka, by his own virtuous example, spread this religion throughout India and his entire empire, which included Malaya, Ceylon, and Indonesia. Later Buddhism penetrated to Nepal, Tibet, China, and Mongolia. Asoka nevertheless respected all religious sects. He preached vegetarianism, abolished alcohol and the slaughter of animals. H. G. Wells, in his abridged version of his Outline of World History, wrote: ‘Among the tens of thousands of names of monarchs accumulated in the files of history, the name of Asoka shines almost alone, like a star.”
It is said that the Emperor Asoka, aware of the horrors of war, wished to forbid men ever to put their intelligence to evil uses. During his reign, natural science—past, and present—was vowed to secrecy. Henceforward, and for the next two thousand years, all researches, ranging from the structure of matter to the techniques employed in collective psychology, were to be hidden behind the mystical mask of a people commonly believed to be exclusively concerned with ecstasy and supernatural phenomena. Asoka founded the most powerful secret society on earth: that of the Nine Unknown Men.”
উক্ত কিতাবে আরো বলা হয়েছে যে, এই গুপ্তসমাজটি আধুনিক ভারত গঠনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া ভারতীয় বিজ্ঞানী বসু ( খুব সম্ভবতঃ জগদীশ চন্দ্র বসু) এবং রাম (খুব সম্ভবতঃ আত্মারাম ) এই সমাজের সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং উক্ত সমাজ বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ রাখে বলে উক্ত কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠমন্ডলী, বাইরের জগত বলতে এখানে আসলে শয়তান ও জ্বীন জগতের কথা যেবলা হয়েছে তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও পশ্চিমা জগতের পন্ডিতদের সাথে ভারতীয় এই গুপ্ত সমাজের রহস্যজনক সম্বন্ধ থাকার বিষয়টিও উক্ত কিতাবে উঠে এসেছে।
তদানীন্তন ভারতে কর্মরত একাধিক পশ্চিমা কর্মকর্তা এই গুপ্ত সংগঠনের অস্তিত্বের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।অশোকের যুগের প্রধানতম নয় নবগুপ্তের উপর কি কি বিষয়ে গবেষণার ভার দেওয়া হয় বা তাঁরা কি কি বিষয়ের উপর গবেষণা করেছিলেন তা শুনলে  আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা হবে। সেযুগেই তাঁরা গবেষণা করেছিলেন এমন কিছু বিষয় নিয়ে যা বর্তমান যুগে আমরা নতুন জেনেছি।   নবগুপ্তের লেখা বইগুলোর প্রথমটি হল টেকনিক অফ প্রোপাগান্ডা অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার নিয়ে। অর্থাৎ যুদ্ধে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে সাইকোলজিক্যাল ইন্ফ্লুয়েন্স বিস্তার কিভাবে করা যায় সেই বিষয়ে। আধুনিক যুদ্ধে এই বিষয়টি ব্যপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
দ্বিতীয় বইটি হল সাইকোলজির উপর। একজন মানুষকে সাইকোলজিক্যালি কিভাবে হত্যার দিকে এগিয়ে দেওয়া যায় । ধারণা করা হয় এই কিতাব থেকে জুডো বিদ্যার উৎপত্তি।
তৃতীয় কিতাবটি মাইক্রোবায়োলজির উপর লিখিত, চতুর্থ বইটি ট্রান্সমিউটেশন অফ মেটালস বা ধাতব পদার্থ গলিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার পদ্ধতি নিয়ে। পঞ্চম কিতাবটি হল দুনিয়াবী ও অদুনিয়াবী বা জীন ও শয়তানের সাথে সংযোগ স্থাপন নিয়ে। ষষ্ঠ কিতাবটি মধ্যাকর্ষণ শক্তির রহস্য নিয়ে, সপ্তম কিতাবটি সৃষ্টিতত্ত্বের উপর, অষ্টম কিতাবটি আলো নিয়ে এবং নবম কিতাবটি সমাজবিজ্ঞানের উপর রচিত। অত্যন্তঃ আশ্চর্যজনক বিষয় হল সেই সুপ্রাচীন যুগে তারা এসকল আধুনিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছিল। এটা শয়তানের সহায়তা ব্যতীত আদৌও সম্ভব নয়।
 আনশুল দুপারী নামক একজন লেখক এই সংগঠন নিয়ে আস্ত একটি কিতাব লিখে ফেলেছেন যার নাম হল ‘Ashoka and the Nine Unknown’ । উক্ত কিতাবের মধ্যে তিনি প্রথম যুগে অশোক যে নয়জনকে নিয়ে নবগুপ্ত গঠন করেন তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে রয়ছেন মনোরথ, বৎসল, রবি, যশবর্ধন, সুকুমার, কর্ণিকা, সার্থক প্রমূখ। যদিও এই নামগুলো কতটুকু অথেনটিক তা আমার জানা নেই।
পরিশেষে প্রশ্ন হল, আসলেই কি অশোকের এই অজানা নবরত্নের অস্তিত্ব ছিল? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পাওয়া দুষ্কর। তবে উনবিংশ ও বিংশ শতকে ভারতে কার্যরত বৃটিশ ও ফ্রেঞ্চ কর্মকর্তা ও আগমনকারী লেখকরা এই সংগঠনের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। উদাহরণস্বরূপঃ বিখ্যাত ফরাসি স্যাটানিস্ট লেখক ও এককালীন ভারতে নিযুক্ত কনসাল জ্যাকোলিয়টও তাঁর কিতাবে এই সংগঠনটির কথা স্বীকার করেছেন।  আমাদের জেনে রাখতে হবে যে, অশোকের  সময়টা ছিল খুবই দুর্যোগপূর্ণ। এসময় ভারত ছিল একটি শয়তানবাদের আখড়া। অশোকের মাধ্যমে তদানীন্তন যুগে ভারতের বুকে এধরনের একটি শয়তানবাদী সংগঠন গড়ে ওঠা আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়।
_________________________
• তথ্যসূত্রঃ 
১. আল কুরআনুল কারীম
২. তারীখুল এবার, ইমাম ইবনু খলদূন রাহিমাহুল্লাহ।
৩. The Dying God by David Livingston
৪. The Two Babylonians by Alexander Hislop
৫. Histories by Herodotus
৬. Terrorism and Illuminati by David Livingston
৭. History of the Armenians by Moses Khorenatsi
৮. India’s Ancient Past by Ram Sharan Sharma
৯. India: A History by John Keay
১০. The Nine Unknown by Talbot Mundy
১১. The morning of the magicians : secret societies, conspiracies, and vanished civilizations by Louis Pauwels and Jacques Bergier
১২. Ashoka and the Nine by Anshul Dupare
১৩.  MITHRAIC SOCIETIES From Brotherhood Ideal to Religion’s Adversary by Abolala Soudavar
© Iktishafulasrar.blogspot.com

 2,944 total views,  1 views today

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.